সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি সুপ্রিয়া পাশে নেই। ভাবলাম হয়ত ওয়াশরুমে গেছে। আড়মোড়া ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে সেদিকে গিয়ে দেখলাম সেখানেও নেই। দু-একবার ডাকাডাকি করার পরেও তার কোন সাড়া শব্দ পেলাম না। তারমানে সে আশেপাশে কোথাও নেই। এই মেয়েটাকে নিয়ে আর পারা গেল না। কাল রাতে ওর সাথে একটু রাগারাগি হয়েছে। স্বামী-স্ত্রী'র মাঝে মাঝেমধ্যে রাগারাগি হবে এটাই স্বাভাবিক। তাই বলে সকালে ঘুম থেকে উঠে একেবারে লাপাত্তা হয়ে যাবে? এবার তাকে কাছে পেয়ে নেই, চরম ভয়ংকর একটা শাস্তি দেব। সে পেয়েছেটা কি হু...

এদিকে সকালে ঘুম থেকে উঠে সুপ্রিয়ার চাঁদমুখ খানা না দেখতে পেলে আমার কেমন যেন খালি খালি লাগে। ওর হাতের, ওর ঠোট লাগানো চায়ের কাপের চা না খেলে আমার তৃপ্তি মেটে না। সকালে ও যখন গোসল করে রুমে আসে, তখন আবার খুনসুটিতে ওকে জড়িয়ে না ধরলে আমার আলসি কাটে না। ওর লম্বা মেঘের মতো ঘনকালো চুলের ঘ্রাণ না নিলে আমার মাথা কাজ করে না। মোদ্দা কথা সকালটা শুরু হতে হবে সুপ্রিয়াময়। ওকে দিয়ে শুরু করতে না পারলে আমার সেই দিনের পুরোটাই মাটি। মেয়েটাকে বিয়ে করার পরে থেকেই এই সমস্যা গুলো হয়েছে। একটু বেশি ভালবাসি বলে আজকের এই দশা! নাহ্, এবার ওকে মজা বোঝাবো। আমি কি জিনিস ওকে হারেহারে টের পাওয়াবো।
মেঝেতে বসে আছি আর ভাবছি। আমার মাথা কাজ করছে না। ফ্লোরে সবকিছু ছড়ানো ছিটানো। আমার একটা বদঅভ্যাস হলো, রাগ হলে মেয়েদের মত সবকিছু ভাঙ্গচুর করা। সবকিছু এলোমেলো করা। এখন সেগুলাই করছি। তবুও মনের রাগ মেটেনি। ধীরে ধীরে একটু শান্ত হওয়ার পরে ভাবলাম, নাহ! কাল রাতে হয়ত একটু বেশি বেশি রাগারাগি করা হয়ে গেছে। এতটা না রাগলেও পারতাম। আর রাগারাগি করেছি ভালো কথা, ওর গায়ে হাত না তুললেও পারতাম। হাত তোলাটা একটু বেশি বেশি হয়ে গেছে বোধহয়। এই হাত আর রাখব না, মনে মনে ভাবতেই বাংলা সিনেমার মতো হাতকে কষ্ট দেয়ার জন্য মেঝেতে কিল-ঘুসি দিতে লাগলাম। হাতের কাছে চাকু থাকলে হয়ত হাতটাই কেটে ফেলতাম!
আমি হাত-পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে কাদছি আর সুপ্রিয়াকে ডাকছি। 'প্লিজ, সুপ্রিয়া ফিরে আসো। আমার ভুল হয়ে গেছে আর হবে না। তুমি যা শাস্তি দেবে মাথা পেতে নেবো।'
নাহ, এভাবে কাজ হবে না। সুপ্রিয়া ওর বাবার বাড়ি গেছে। যাই, শুশুরবাড়ি গিয়ে দরকার হলে সুপ্রিয়ার পায়ে পড়ব! তবুও ওকে ফিরিয়ে আনতে হবে। আনতেই হবে। সুপ্রিয়া ছাড়া আমার জীবন আর পানি ছাড়া মাছের জীবন সমান কথা।
যেই ভাবা সেই কাজ! ভালো দেখে কাপড়-চোপড় পড়ে তৈরি হলাম শুশুরবাড়ি যাওয়ার জন্য। সুপ্রিয়াকে ফিরিয়ে আনতে যা যা করতে হয় সব করব, সে যা যা শর্ত দেবে সব মেনে নেব। যে করেই হোক ওকে ছাড়া বাড়ি ফিরব না বলে মনে মনে শপথ করলাম। এমন সময়ে 'মা' ঘরে ঢুকলেন,
- কিরে তোর কি হয়েছে?
- কই? কিছু না তো…
- তাহলে চিৎকার করে কাকে ডাকছিলি? আর ঘরের ভিতরে সবকিছু এমন উল্টা-পাল্টা কেন?
- ওহ! না মানে……
- না মানে কি? আর এভাবে সেজেগুজে কোথায় যাচ্ছিস?
- সুপ্রিয়াকে আনতে…
কথাটা শোনা মাত্র মা আমার দিকে কেমন যেন সন্দেহের চোখে তাকালো। তারপরে বলল,
- সুপ্রিয়া কে?
- সুপ্রিয়া কে মানে? সে তোমার পুত্রবধু। গতকাল রাতে ওর সাথে একটু রাগারাগি হয়েছে বলে সে বাপের বাড়ি চলে গেছে, তাই ওকে আনতে যাচ্ছি…
আমার কথা শুনেই মা চিৎকার করে বললেন,
- ওরে পোড়া কপাইল্যা বিয়ে না করেই বউয়ের জন্য পাগল হইছো? দাড়া আজ তোর একদিন কি আমার একদিন! দু-পয়শা আয়-রোজগারের নাম নেই অথচ বিয়ে করার স্বপ্ন দেখো?
মা এদিক সেদিক তাকিয়ে কি যেন খুজতে লাগলো। আমি সুযোগ বুঝে দিলাম ভো দৌড়। মা ধরতে পারলে আর রক্ষে নেই। সুপ্রিয়ার কথা আপাতত পরে ভাবা যাবে, এখন যে দুদিনের জন্য ভাত বন্ধ হলো সেইটা ভাবা বেশি দরকার। আচ্ছা শুশুরবাড়িটা যেন কোনদিকে? দু একদিন খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে।
-সমাপ্ত-

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন